ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন ? Class 9 History

ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তাঁর 'Wealth of Nations' গ্রন্থে ফ্রান্সকে ভ্রান্ত ‘অর্থনীতির এক বিরাট জাদুঘর' (France was a vast museum of economic

নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর| Class 9 History First Chapter All Question and Answer

ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন?

অধ্যায়  ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক 
প্রশ্ন: ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন ?

ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন ?

ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তাঁর 'Wealth of Nations' গ্রন্থে ফ্রান্সকে ভ্রান্ত ‘অর্থনীতির এক বিরাট জাদুঘর' (France was a vast museum of economic errors) বলেছেন। ফ্রান্সের কর ব্যবস্থার মূল ত্রুটি ছিল বিশেষ অধিকার, কর প্রদানে সক্ষমদের ওপর কম হারে কর ধার্য করা এবং কর ছাড়। এর ফলে ফ্রান্সের রাজস্ব ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলার কারণ :

ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থা :

বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের কর ব্যবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ। কর ধার্যের ব্যাপারে কোনো ন্যায় ও নীতিতে সঠিক নিয়ম ছিল না।

ত্রুটিপূর্ণ কর আদায় ব্যবস্থা :

কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কর ব্যবস্থায় সুবিধাভোগী ও সুবিধাহীন সম্প্রদায়ের মধ্যে পৃথক নীতি ছিল।

কর প্রদানে ছাড় :

অভিজাত ও যাজক শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণি বলা হত। ফ্রান্সের মোট কৃষিজমির ৫০ ভাগ ছিল এদের দখলে। তাদের কর দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা রাষ্ট্রের মোট রাজস্বের মাত্র ৪ শতাংশ কর প্রদান করত। যাজকরা খুশিমতো রাজাকে একটি স্বেচ্ছাকর দিত মাত্র। সকল প্রকার প্রত্যক্ষ কর থেকে তারা অব্যাহতি পেত।

করভারে জর্জরিত তৃতীয় সম্প্রদায় :

ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ, অর্থাৎ তৃতীয় সম্প্রদায়ের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিই সবথেকে বেশি শোষিত ও করভারে জর্জরিত ছিল। সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা তৃতীয় সম্প্রদায়কেই বহন করতে হত, যেমন— (ক)প্রত্যক্ষ কর : টেইলি (সম্পত্তি কর), ক্যাপিটেশন (উৎপাদন কর) এবং ভিংটিয়েমে (আয়কর)—এগুলি ছিল প্রত্যক্ষ কর। (খ)পরোক্ষ কর : টাইথ (ধর্ম কর), গ্যাবেলা (লবণ কর), এইদস্ (তামাকজাত জিনিসের ওপর কর), করভি (শ্রম কর বা বেগারখাটা), সঁস (নগদ কর), শ্যাম্পার্ত (পণ্য কর), বানালিতে (শস্যভাণ্ডার কর) প্রভৃতি ছিল পরোক্ষ কর।

কর আদায়ে জোরজবরদস্তি :

কর আদায়ের ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কর আদায়কারীরা জোরজবরদস্তি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করত। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের ওপর নানারূপ নির্যাতন চালাত, অথচ যাজক ও অভিজাত শ্রেণিকে এরা বিরক্ত করত না ।

বৈদেশিক যুদ্ধে ব্যয় :

স্পেনের উত্তরাধিকার যুদ্ধ (১৭০২–১৭১৩ খ্রি.), অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধ (১৭৪০-১৭৪৮ খ্রি.), সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ (১৭৫৬-১৭৬৩ খ্রি.) এবং আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে অকারণে অংশগ্রহণের (১৭৭৮ খ্রি.) ফলে ফ্রান্সের ৪০০ কোটি লিভ্র খরচ হয়েছিল। স্বাভাবিক কারণেই ফরাসি রাজতন্ত্র এক চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়।

রাজা-রানির বিলাসিতা :

রাজা চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই ও ষোড়শ লুই-এর বিলাসিতা প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। কথিত আছে সেই সময়ে ভার্সাই রাজপ্রাসাদে প্রায় ১৬ হাজার কর্মচারী বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত ছিল। ষোড়শ লুই-এর পত্নী মেরি আঁতোয়ানেৎ-এর খাস চাকরের সংখ্যা ছিল ৫০০ জন।

উপসংহার :

এই বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থা এবং রাজতন্ত্রের খামখেয়ালিপনা ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। রাজতন্ত্রের এই দেউলিয়া অবস্থাকে ফরাসি বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ বলা হয়। অ্যালবার্ট গুডউইন যথার্থই বলেছেন, ফ্রান্সের প্রাক্-বিপ্লব সরকারের প্রধান দুর্বলতা ছিল ‘ভ্ৰান্ত আর্থিক নীতি।'

ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর কে বলেছিলেন?

প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ তাঁর 'Wealth of Nations' গ্রন্থে ফ্রান্সকে 'ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর' বলেছিলেন। 

ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয় কেন?

বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের কর ব্যবস্থা ছিল বৈষম্যমূলক ও ত্রুটিপূর্ণ।কর আদায়ের ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ।রাজা চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই ও ষোড়শ লুই-এর বিলাসিতা প্রবাদে পরিণত হয়েছিল। আরো বিভিন্ন কারণে ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলা হয়।

© 5 to 10 Note. All rights reserved. Powered by Mrskt