নবম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর| Class 9 History First Chapter All Question and Answer
![]() |
| বাস্তিল দুর্গের পতন টিকা |
| অধ্যায় ১ | ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক |
|---|---|
| প্রশ্ন | বাস্তিল দুর্গের পতন সম্বন্ধে যা জানো লেখো। |
বাস্তিল দুর্গের পতন
ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই বুর্জোয়াদের প্রবল চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তিন সম্প্রদায়ের একত্রে অধিবেশন ও মাথাপিছু ভোটের দাবি মেনে নেন। এই ঘটনা ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের মনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে ।
বাস্তিল দুর্গের পতনের কারণ
খাদ্যাভাব :
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় ভাগে ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে খাদ্যাভাব চরম আকার ধারণ করে। ফ্রান্সে খাদ্যাভাব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব ও সরকারের বৈষম্যমূলক কর নীতি জনগণকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল।
রাজার পদক্ষেপ :
প্রবল চাপে পড়ে ষোড়শ লুই বুর্জোয়াদের দাবি মেনে নিলেও তিনি মন থেকে এই ঘটনা মানতে পারেননি। তিনি প্যারিস ও ভার্সাই-এ প্রায় ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করেন। এরপর তিনি জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকারকে পদচ্যুত (২২ জুন) করলে প্যারিসের উন্মত্ত জনতা হিংসার পথে পা বাড়ায় । রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি হয়, জনতা অস্ত্রের দোকান ও গির্জাগুলিতে লুণ্ঠন চালায় ।
প্যারিসের পরিস্থিতি :
এসময় খাদ্যের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে এসে প্যারিসের উত্তেজিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলিত হলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সশস্ত্র জনতা সরকারি দপ্তরগুলিতে আক্রমণ চালিয়ে বহু নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়, অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে। এরপর ৭-৮ হাজার মানুষ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গের রক্ষীদের হত্যা করে দুর্গটি দখল করে এবং বন্দিদের মুক্ত করে দেয়।
গুজব :
এই সময় একটা গুজব অগ্নিতে ঘৃতাহুতির কাজ করে। হঠাৎই গুজব রটে গেছিল যে, রাজা তৃতীয় সম্প্রদায়কে শায়েস্তা করার জন্য বাস্তিল দুর্গে গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র মজুত করছেন।
বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব
ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই বুর্জোয়াদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করলেও তিনি পুরাতনতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে জনপ্রিয় অর্থমন্ত্রী নেকারকে পদচ্যুত এবং প্যারিস ও ভার্সাইয়ে সেনা মোতায়েন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্যারিসের জনতা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও দখল করে নেয়।
রাজার নতিস্বীকার :
বাস্তিলের পতনের পর আতঙ্কিত রাজা প্যারিসে এসে বিপ্লবের তেরঙা (লাল-নীল-সাদা) পতাকাকে ফ্রান্সের প্রতীক বলে মেনে নেন। বিপ্লবী বেইলি-কে প্যারিস পৌরসভার মেয়র পদে বসানো হয়। জাতীয় রক্ষীবাহিনীকে সংগঠিত করে বিপ্লবী লাফায়েৎ-কে এর প্রধান সেনাপতি করা হয় ।
স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রে আঘাত :
কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ও মধ্যযুগীয় স্বৈরতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের প্রতীক। এখানে বিনা বিচারে প্রজাদের বন্দি করে রাখা হত। তাই বাস্তিলের পতনে রাজতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের ওপর প্রত্যক্ষ আঘাত আসে। এর ফলে রাজতন্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
জনগণের শক্তিবৃদ্ধি :
বাস্তিলের পতন ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি করে। প্রবল প্রতাপশালী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের পক্ষে যে জয় লাভ করা সম্ভব তা বাস্তিলের পতনের ঘটনা প্রমাণ করে দেয়।
অভিজাতদের দেশত্যাগ :
বাস্তিলের ঘটনার পর আতঙ্কিত বহু অভিজাত প্রাণভয়ে বিদেশে চলে যায়। অভিজাতরা উপলব্ধি করে যে, বিদেশি শক্তির সাহায্য ছাড়া তাদের বিশেষ অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় ।
মূল্যায়ন :
বাস্তিলের পতনের পর প্যারিসের শাসনক্ষমতা বুর্জোয়ারা দখল করে নেয়। ঐতিহাসিক গুডউইন বলেছেন যে, “বাস্তিলের পতনের মতো বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা বিপ্লবে আর ঘটেনি।”
বাস্তিল দুর্গের পতন কবে হয় ?
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের পতন হয়।
বাস্তিল দুর্গ কিসের প্রতীক ?
বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী ফরাসি রাজতন্ত্রের অত্যাচার ও নির্যাতন প্রতীক ।
বাস্তিল দুর্গ কোন রাজার আমলে তৈরি হয়?
বাস্তিল দুর্গ রাজা পঞ্চম চার্লস এর আমলে তৈরি ।
বাস্তিল দূর্গ কি?
বাস্তিল দুর্গ ছিল ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের দুর্গ। এই দুর্গে রাজতন্ত্রের বিরোধী ব্যক্তিদের বন্দি করে রাখা হত ও অত্যাচার করা হত। দার্শনিক ভলতেয়ারও রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করার জন্য বাস্তিল দুর্গে বন্দি ছিলেন।
